সাম্প্রতিক BIMSTEC সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত করা জরুরি, এবং এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব তরুণদেরই নিতে হবে।
পরিবর্তনের আহ্বান:
নোবেল বিজয়ী ও প্রখ্যাত সামাজিক উদ্যোক্তা ড. ইউনূস থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত BIMSTEC ইয়ং জেনারেশন ফোরামে তাঁর বক্তব্যে এক শক্তিশালী পরিবর্তনের বার্তা দেন। তিনি বলেন, প্রকৃত বৈশ্বিক পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের প্রচলিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে এবং এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে তারা প্রচলিত চাকরির ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগোতে পারে।
উদ্যোক্তা মানসিকতার বিকাশ:
ড. ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দেন, যেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা গড়ে তোলা হবে। তিনি মনে করেন, শুধু চাকরির সন্ধান করাই নয়, বরং নতুন কিছু সৃষ্টির মানসিকতা তৈরি করাই জরুরি। এলন মাস্ক ও রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো অনেক সফল উদ্যোক্তা নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেও নিজেদের স্বপ্ন সফল করেছেন। ড. ইউনূস চান যে, থাইল্যান্ডসহ BIMSTEC অঞ্চলের দেশগুলোর শিক্ষাক্রমে উদ্যোক্তা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নতুন কিছু উদ্ভাবন ও নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে।
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তরুণদের সম্পৃক্ত করা:
BIMSTEC সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় ড. ইউনূস তরুণদের সমাজে তাদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। যদিও তিনি মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না, তবু ইয়ং জেনারেশন ফোরামে অংশগ্রহণ করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। থাইল্যান্ডের যুবসমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "সুযোগের জন্য অপেক্ষা করো না, সুযোগ তৈরি করো।" এই বার্তাটি তরুণদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তাদের নিজস্ব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে। আন্তর্জাতিক ফোরামে তাঁর উপস্থিতি কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার গুরুত্বও তুলে ধরে, যা যুব নেতৃত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দাসত্বের মানসিকতা ভাঙা:
ড. ইউনূস প্রচলিত সেই মানসিকতার সমালোচনা করেন, যা যুবসমাজকে কেবলমাত্র চাকরির জন্য প্রস্তুত করে এবং স্বাধীন চিন্তার সুযোগ সীমিত করে। তিনি বলেন, "চাকরিকে শুধু বেঁচে থাকার মাধ্যম হিসেবে দেখলে আমাদের সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।" বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তরুণদের নির্দিষ্ট পেশার দিকে চালিত করছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সৃজনশীলতা দমিয়ে দেয়। তিনি চান যে, তরুণরা যেন নিজেদের চাকরিপ্রার্থী নয়, বরং নতুন কিছু তৈরির সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে দেখে। এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের প্রচলিত ধারা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তরুণদের জন্য সহায়ক কাঠামো গড়ে তোলা:
ড. ইউনূস মনে করেন, উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহায়ক কাঠামো থাকা জরুরি, যাতে তারা তাদের উদ্যোগ সফলভাবে পরিচালনা করতে পারে। এই কাঠামোর মধ্যে পরামর্শদান কর্মসূচি, আর্থিক সহায়তা, এবং সামাজিক সমর্থন অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। যেমন, তিনি প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে যে, সহায়ক পরিবেশ কীভাবে ব্যক্তিকে তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার, কর্পোরেট সংস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা বিকশিত হতে পারবে। বিশেষ করে যুব নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোর জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।
BIMSTEC সম্মেলনে ড. ইউনূসের বার্তা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়: প্রচলিত কাঠামোগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব। উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে তরুণরা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎ নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
COMMENTS